পাহাড় এতই বৈচিত্র্যময় যে তা মুখে বলার মত নয়। চারদিকে দিগন্ত জুড়ে সবুজের সমারোহ,পাখির গান,নানা প্রাণির ডাক, বাঁশ পাতার জুম ঘর, বড় বড় বৃক্ষরাজি, পাশে বয়ে যাওয়া কলকল ছড়া। সবই ছবির মত সুন্দর, এ বসুধায় চিরকাল বেঁচে থাকতে চায়। এ মায়া যেন কখনও শেষ হবার মত নয়।

ঘুম ভেঙে গেল : সকালে পাখির ও বন মোরগের ডাকে ঘুম ভেঙে গেল। গত রাতে চারজনে মিলে একটি মাচাং ঘরে ঘুমিয়েছিলাম। এ মাচাং থেকে বাইরের সব দৃশ্য পরিষ্কার দেখতে পাওয়া যায়।যে আত্নীয় বাড়িতে ছিলাম তারা বাড়ি সামনেই পাহাড়ের কিছু অংশ জুম করার জন্য পরিষ্কার করে পুড়িয়েছেন। মূলত “ঝুম চাষ” এক ধরনের স্থানান্তরিত কৃষিপদ্ধতি। এটি জঙ্গল কেটে পুড়িয়ে চাষ করা হয়, আবার সেই স্থানে জমির উর্বরতা কমে গেলে পূর্বের স্থান হতে কৃষি জমি স্থানান্তরিত করে অন্যত্র আবার কৃষি জমি গড়ে ওঠে। পাহাড়ের গায়ে ঢালু এলাকায় এই চাষ করা হয়। পাহাড়িরা শত-শত বছর ধরে এ অন্ধলে জুম চাষ করে, শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করছে।

সে যাহোক বাকি চারপাশের অংশ গুলো এখনও বন্য সেখান থেকে নানা পাখি ও বন মোরগ ডাক দিচ্ছে। সকালরে ঠাণ্ডা আবেস ও এমন বন্য প্রাকৃতিক পরিবেশে জীবনে থাকা হয়নি। এক রাখাল মহিষ পাল গুলোকে দূর পাহাড়ে নিয়ে যাচ্ছে, মহিষের গলার ঘণ্টীর টক টকা টক টক শব্দ সাথে পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ ও ভোরের মিহি কুয়াশা মনকে ভরিয়ে দিল। ঠিক এখান থেকে একটু একটু ভূলংতুলি মোনটি দেখা যাচ্ছে। আগামী চারদিন থাকব সেখানে, এ ভেবে মনে মনে একটি জিনিস মনে হলো গুপ্তধনের সন্ধানে এসে আমার প্রথম হাত্তোন দেখা হবে, প্রথম বন্য পরিবেশে থাকা হবে,প্রথম ভূলংতুলি মোন দেখবো। এছাড়াও যে এরিয়ায় থাকবো সেটি পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে গভীরে ও বন্য এড়িয়ায়, এ ভেবে ভালও লাগছে। সকালের খুব দ্রুত খাবার খেয়ে নিলাম । সাথে চাল-চিদোল-তেল-লবন-রেকসিনসহ যা যা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র লাগে তা নিলাম। এবার
গুপ্ত ধনের সন্ধানে যাত্রা শুরু! শেষ গ্রাম থেকে
মেঠোপথ ধরে যাত্রা শুরু: সবার আগে শিকারি দাদা চলে আসলেন, তার সাথে আরো চারজন ছিলো। আমরা যার বাড়িতে ছিলাম অর্থাৎ জেঠিমার ছেলে নীলবরন সেও ছিলো আমাদের সঙ্গে। তাকে ছোট বেলায় দেখেছিলাম দিঘীনালাতে সে তখন সেখানে পড়াশুনা করতো। পড়াশোনা শেষ করতে না পেরে সে এখন বিয়ে করে এক বাচ্চার বাবা হয়ে গেছে। সাথে আরো যারা ছিলেন তারা ছিপছাপ চেহেরার ও সুঠমদেহের অধিকারী। সেখান থেকে সিত্তিবু নামে একজন আমাকে দেখে মুচকি হাসি দিল, খুব সরল স্বভাবের। সর্বমোট এগার জন হলাম, আমরা তিন ভাই ও বাকি গুলো গ্রামের যুবক ও বিবাহিত মধ্য বয়সী। আমরা আমাদের সাথে দুটি মাছ ধরার জাল ও রাজ হাতিয়ার নিলাম। গতরাত যে বাড়িতে ছিলাম সেখানে একটি পোষ মানা ময়না পাখি রয়েছে। তার সাথে এই প্রথম পরিচয় , এত মায়া মাখা পাখি জীবনে দেখেনি। নানা কথা, ডাক , আওয়াজ নকল করতে বেশ পটু পাখিটি। পাখিটিকে সকালে খাঁচা থেকে খুলে দেওয়া হয় এবং বিকালে আবার খাঁচায় রাখা হয়। সারাদিন সে মালিকের সাথে গরু গুলো চড়াতে যায়। অন্য জঙ্গলে ঘুরতে গেলে সেখানে গিয়ে বেশি সময় থাকে না। তাছাড়া বাড়ির মালিককে সে বাবা বলে ডাকে। যাহোক আমাদের হাটাঁ শুরু হয়েছে পথে পথে পাহাড়ি গ্রাম গুলোর বাড়ি গুলো ছবির মত সুন্দর। বাশঁ পাতার তেরী টং ঘর, পাশে বয়ে যাওয়া ছোট্ট ছড়া, জুম ও সে পাশে নিবিড় বনে বড় বড় বৃক্ষ। এ বৃক্ষ গুলো এত বড় বড় যে সেখানে ঘর তৈরী করে থাকা যাবে। ছড়ার ওপার থেকে কিছু শিশু আমাকে দেখে চুপছে গেল, আমি যখন আলতো হাসি দিয়ে হাত নাড়ালাম তখন মুখে হাসি চেপে রাখতে না পেরে হাসি দিলো। এ একটা জিনিস ভেবে খুব কষ্ট হয় যে এ প্রজন্ম গুলো ভবিষ্যৎ কি হবে? তাদের বাড়ি গুলো শেষ স্কুল থেকে দুই দিনের দূরে। এ শিশু গুলোর ভবিষ্যৎ কি হবে জানি না। এ ভেবে ভেবে হাটাঁর গতি বাড়িয়ে দিলাম।

বৃদ্ধ যুগল : বেলা দশটার দিকে আমরা একটি জুম চাগালায় (সাইটে) পৌঁছায়। জুমের কালো মাটিতে এক বৃদ্ধ যুগল ধান গুঁজে দিচ্ছে। এ নিবিড় বনে শুধু এক বৃদ্ধ ও তার জীবন সঙ্গিনী রয়েছেন। জীবনের শেষ বয়সে এসেও হাটে হাট ধরে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিচ্ছেন। এত হাড় ভাঙা পরিশ্রম করে তারা জুমে সোনার ফসল ফলায়। নিজেদের ঘাম ও রক্তের বিনিময়ে জুমে মামরা-কঠু-ভু্ট্টা-গচ্চি ফলায়। তাদের দেখে বিষণ মায়া লেগে গেলো। অথচ, আমরা যারা সাধারণ মানুষরা বাজারে জুমের ফসল কিনতে যায় কখনও ভাবি না কেমন করে এ ফসল হয়েছে! তারা ফসল ফলাবে এরপর একদিন হেটে অথবা ভোর রাতে হেটে বাজারে নিয়ে যাবে । আর আমরা ঘুম থেকে রাজার মত তাদের ফসল গুলো সস্তায় কিনতে যায়! আমি মনে করি আমরা নিজেরা যথটা নিজেদের সু-শিক্ষিত মনে করি আসলে তথটা সু-শিক্ষিত ও মানবিক নই।
এমন দৃশ্য প্রায় সব বাজারেই দেখা যায়। সে যাহোক এরপর আবার এক ঘণ্টা হেটে একটি পরিবার দেখতে পায়। সেও এক জাত শিকারি, আমাদের দলের লিড শিকারির সাথে তার বন্ধুত্ব বেশ ঘাড়। তিনি আমাদের এগার জনের দল দেখে উৎসুক মনে বললেন “মুও যে পারিম নি” আমাদের সাথে যেতে চাইলেন। আমরা থাকেও সঙ্গে নিয়ে নিলাম।

হাত্তোনে প্রবেশ: সবুজ ছনের ঘন বন, সাথে ছড়া ও বাশঁ বাগানে প্রবেশ করলাম। এ বনে সাধারণত বড় বড় বৃক্ষ কম ,বাশঁ বেশি। তবে এ বনের বাঁশ গুলো অনেক মোটা। এ বনের বাশঁ দিয়েই বিগত ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কর্ণফুলী কাগজ মিল চলে। এ বন উজাড় ও প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস হওয়ার পিছনে এ পেপার মিলের প্রত্যক্ষ হাত রয়েছে। বন এতটাই ঘন যে হাটতে পারা যায় না বাঁশের জন্য । এ বনের বাশঁ গুলো দিগন্ত জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। নানা পাখির গান ও ছড়ার কলকল শব্দে এ যেন অন্য এক জগত। জীবনে কখনও ভাবিনি ব্রিটিশদের ফেলে যাওয়া গুপ্তধন সন্ধান করতে এসে এমন অপরুপ দৃশ্য দেখতে পাবো। বিগত কয়েক বছর আগে থেকে নতুন করে বাশঁ কাটা বন্ধ করে দিয়েছে পাহাড়ি সংগঠন গুলো। কেননা দিন দিন পাহাড় উজাড় হয়ে যাওয়ায় এই অন্ধলের মানুষ গুলো চরম পানির অভাবে ভুগছে। তাই পানির প্রাকৃতিক উৎস গুলো চলমান রাখার জন্য প্রাকৃতিক বন উজাড়ের উপর কঠোর নিষেধ রয়েছে। এখন সব বন্ধ রয়েছে।

ভূলংতুলি মোনের পাদদেশ : ঘড়ির কাটা ঠিক দুইটা বিশ ভূলংতুলি মোনের পাদদেশে পৌঁছে গেলাম। জায়গাটি এতই সুন্দর যে কোন ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। ছোট্টছোট্ট দুটি ছড়ার মিলনস্থলে দুটি “বাজে” (দুটি অস্থায়ী থাকার ঘর) ঘর গুলো বড় বড় বৃক্ষের নিচে তৈরী। ঘরের চালাটি কলা পাতার এবং বাকি অংশ গুলো বাশ দিয়ে তৈরী। এমন সুন্দর জায়গায় ঘর গুলো তেরী করা হয়েছে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে।
ও একটু পরে বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে, তাই সকলে নিজ নিজ কাজে মন দিলো, কেউ রাজ হাতিয়ার নিয়ে শিকারে গেল। কেউবা জাল নিয়ে ছড়াতে মাছ ধরতে গেল, সজীব দা ও ছোট ভাই স্মিতের দায়িত্ব হল ভাত রান্না করা আমার দায়িত্ব হল বাঁশের ছুমায় ছড়া থেকে পরিষ্কার পানি সংগ্রহ করা। বৃষ্টি আসলে পানি গুলো অপরিষ্কার হয়ে যাবে তাই দলের সবচেয়ে ছোট সদস্যকে নিয়ে পানি তুলতে গেলাম। চারদিকে ছিমছাম পরিবেশ বানরের দল গুলোর শব্দ শোনা যাচ্ছে। মনে মনে ভাল্লুকের ভয় নিয়ে পানি নিতে গেলাম। কারণ এ বনে বন্য ভাল্লুকের সংখ্যা নাকি নেহাত কম নয়।
পানি তুলতে গিয়ে এক কান্ড হল সারা ছড়াতে চিংড়িমাছ । আমার সাথে যে ছোট ভাই ছিল সে বলল পানি তোলা শেষ করার পর চিংড়ীমাছ ধরব। এখন কথা হচ্ছে আমি জীবনে প্রাণি হত্যা করিনি এবং ১৬ বছর পর্যন্ত এক ধরনের সবজী ভোজী ছিলাম। এখন আমাকে নাকী প্রাণি হত্যা করতে হবে। যা হোক বেচেঁ থাকার রীতি এমনি। সেই সাথে এখন এত গভীরে এসে কোন খাবার কোন কিছু জোগার না করলে রাত্রে খাবার হবে না। কারণ জঙ্গলে বেচেঁ থাকতে হলে প্রকৃতির নিয়মে বাচঁতে হবে। পানি তোলা শেষ করে এ ভেবে ভয়ে ভয়ে চিংড়ী ধরা শুরু করলাম। এটি আমার জীবনে প্রথম কোন প্রাণিকে ধরার অভিজ্ঞতা।

চিংড়িমাছের ঝোল দিয়ে রাতের খাবার:
বিকালে চিংড়িমাছ ধরার পর আমরা সবাই মিলে পাথরের এক বন্য ফ্রিজে গোসল ছাড়লাম। যা আামরা চাকমা ভাষায় এটিকে “হুম্নুক” বলি। তখন ঘনার দিকে ঠাণ্ডা ও প্রশান্তি বাতাস বয়ছে। আমাদের থাকার পরিবেশটা আরো সুন্দর হয়ে উঠল। সন্ধা নেমে এল তখন চারদিকে জোনাকির, ও পোকামাকড় গুলো নানা শব্দে ডাক দিচ্ছে। ঠিক, একটু পরে আমাদের প্রিয় বাবুর্চি “স্মিত “খাবারে সময় এসেছে বলল। সত্য কথা হলো সবাই এখন ক্লান্ত। সবার চেহেরার সে চিত্র পরিষ্কার ভেসে উঠছে।
তাই, সন্ধ্যা হতেই খিদের জ্বালায় চাদঁকেও রুটির মত দেখতে পাচ্ছি। আমি যে চিংড়িমাছ ধরেছি তা মাছের সাথে রান্না করা হয়েছে। চিংড়ী গুলো মাছের সাথে রান্না করে লালচে হয়ে গেছে। রাতের খাবার সবাই মিলে এ বন্য পরিবেশে খেলাম। খাবারের পর ছড়ার পাঁশে আগুন বসিয়ে নানা গল্প ও কল্প কাহিনী বড়দের থেকে শুনলাম।
তখন জঙলের শব্দ গুলো আস্তে আস্তে কমতে লাগলো । শুধু পোকামাকড় ও ছড়ার কলকল শব্দ পরিবেশটা আরো সুন্দর হলো।
শরীরের অবস্থা খুব একটা ভাল না। টানা দুই দিন ধরে হেটে আমরা তিন ভাই দূর্ভল বোধ করছি। আমি জীবনে এত দূরে ও দূর্গম জায়গায় হাটিনি। কয়েক ঘন্টার পর সবাই নিজ নিজ জায়গায় চলে গেলো।
স্মিত বাঁশের চুয়ায় পানি দিয়ে গরম করে দিল। আমার সাথে নেওয়া হরলিক্স বানালাম। এবং আমার পানি খাওয়া বোটলে ভরে আস্তে আস্তে পান করতে লাগলাম। এ পানি খাওয়ার বোটলটি মূলত আমার ছোট বোন ত্রিধরার উপহার দেওয়া। ভূলংতুলি মোন যাব সেজন্য নিজেদের দোকান থেকে একটি ফ্রি বোটল আমাকে উপহার দিয়েছে। যাহোক, আমাদের “বাজে”তে থাকার জায়গায় সবাই জুনিয়র ; সর্বমোট ছয় জন। সবাই যে যার মত ঘুমাচ্ছে আমি আমার ব্যাগ ঘাড়ে দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছি। তবে, ছড়ার কলকল শব্দে ঘুম পাচ্ছে না।
আমরা যে জায়গায় মূলত রাত কাটাচ্ছি এটি তৈরী করেছেন “সিগোনসাক” তুলতে আসা লোক জন। তারা এ সিগেনসাক জঙ্গল থেকে তুলে ভারত বা অন্যত্ররে বিক্রি করেন। হাত্তোন ও জুম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভিতরের এসব গভীর জুমিয়া গুলো এভাবে জীবন নির্বাহ করছে।
আর এ সিগোনসাকের মূল গুলো অতন্ত্য সুগন্ধি, স্থানীয় লোকেরা বলেন ভারতে এগুলো দিয়ে সুগন্ধি ও প্রসাধনী তৈরী করা হয়। তাই স্থানিয় কিছু লোকের জন্য এগুলো বেচেঁ থাকার রুজি রুটি চলে।
আমার মাথা ঠিক বরাবর এক গাদাঁ সিগোনসাক রেখে গিয়েছে, এসব সিগোনসাক এখন সুগন্ধি ছড়াচ্ছে চারদিকে।
এদিকে কালকে গুপ্তধনের সন্ধানে “ভূলংতুলি” উঠব কি দেখব সে চিন্তাই ও আর ঘুম পাচ্ছে না। এও ভাবি যদি সে অলৌকিক বাঘের দেখা পায় কি হবে? যদি অন্য কিছু সমস্যা পরি কিভাবে সমাধান করব সে চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে গেলাম।

পাখির ডাকে খুব ভোরে পাঁচটা য় ঘুম ভেঙে গেল। এখন পেটের অবস্থা ভাল না। পানির জন্য এ সমস্যা হয়েছে নাকি জানিনা। ওয়াশ রুমে যেতে হবে কিন্তু এখানে তো কিচ্ছু নেই। এখানে পাতা দিয়ে কাজ চালতে হয়। তার উপরে ভাল্লুকের ভয় এখন কি করি ? ব্রিটিশদের ফেলে যাওয়া গুপ্তধনের সন্ধানে এসে এ কি বিপদে না পড়লাম।
দ্বিতীয় পর্বের সমাপ্তি
(Read the 1st part here if you haven’t yet)
লেখক- সুপন চাকমা
বন ও পরিবেশ কর্মী, ইউটিউবার
বি.এ,এম.এ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
আমার ফেইসবুক লিং
https://fb.watch/bfa3JyHHyr/
আমার ইউটিউব লিং
https://youtu.be/bNzL8oT7e8Q