আমাদের সমসাময়িক বৌদ্ধ সমাজ এবং বিভ্রান্তিকর ধর্মবাদ।

অসভ্য, বেয়াদব, অশিক্ষিত, মূর্খ, দায়িত্বহীন লোক দ্বারা কোনদিনও ভাল এক্টা সমাজ ঘটন করা সম্ভব না।

অশিক্ষিত, স্বার্থপর, টাকা লোভী, নাম লোভী, কুহক, মানবতাহীন, জনসাধারণের টাকা অপচয়কারী, লোক দেখানো এবং ফটোশপ-অর্হত ভিক্ষু এবং নেতার কাছ থেকেও কোনদিন ভাল শিক্ষা এবং সামাজিক ভাল নেতৃত্ব আশা করা যায়না।এদের যতই শত শত অন্ধত্ব অনুগামী থাকুক না কেন, ভাল নেতৃত্বের অভাবে কারোর সমূহিক মংগল হয়না বরং ক্ষতি হয়।

নির্বাণ যেতে বা উপলব্ধি করতে লাখ টাকার গাড়ি , কোটি টাকার মূর্তি , কোটি কোটি টাকার প্যাগোডা দরকার হয়না। দরকার শুধু বিনামুল্যে প্রাপ্য শীল, সমাধি , প্রজ্ঞা এই ৩টা জিনিস মাত্র। সুনীত, সোপাক,লোসক তিস্স ইত্যাদি ভিক্ষুরা প্রবজ্যার আগে ছিল ময়লা আবর্জনা থেকে খেতে খাওয়া ভিখারি কিন্তু ওরাও অর্হত্বফল লাভ করেছিল। অংগুলিমাল হাজারের বেশি নর নারী খুন করেছিল তবু্ও অর্হত্বফল লাভ করেছিল। পটাচারা ছিল নগ্ন পাগল মহিলা, আম্রপালি ছিল শহরের বিখ্যাত বেশ্যা যার কাছে যেতে হলে আগেভাগে এপয়েন্টমেন্ট দরকার হতো এবং রাজা-মন্ত্রী, ধনীরা সবাই যেতো, কিন্তু তারাও ভিক্ষুণী হয়ে শীল, সমাধি, প্রজ্ঞা দিয়ে অর্হত্বফল লাভ করেছিল। বিশাখার ২০ জন ছেলেমেয়ে ছিল কিন্তু উনিও মার্গফললাভী এবং উনার ছেলেমেয়েরাও মার্গফললাভী ছিলো। অনাথপিন্ডিক সে আমলের মিলিয়নার ছিলেন, তিনি নিজেও মার্গফললাভী এবং ছেলেমেয়েরাও সবাই মার্গফললাভী ছিলেন। যদিও বা চাকমা সমাজে এসব সম্পর্কে না জেনে ফোটোশপ-অর্হত ভিক্ষুরা দেশনা দিয়ে গেছেন বিয়ে করাটাই নাকি মহাপাপ, এক ছেলে আরেক মেয়েকে ভালবাসবে এবং মেয়েও ছেলেকে ভালবাসবে… কত স্বাভাবিক কিন্তু ফোটোশপ-অর্হত ভিক্ষুদের চোখেও এটা মহাপাপী এবং নরকগামী। ত্রিভুবন হিতকামী তথাগত ভগবান বুদ্ধ এভাবে কোথাও দেশনা করেননি।

আসলে বুদ্ধের সবকিছুর শিক্ষাই উল্টো প্রচারণা। দান দেওয়া মনুষ্যত্বের উপরিতম গুণ। কিন্তু দান শুধু টাকা দান কে বুঝাই না যেভাবে আজ আমাদের চাকমা সমাজে প্রচলিত। শারিরীক , বাচনিক , আর্থিক যেকোনো প্রকারে অন্য যেকোন প্রাণীকে সাহায্য করাটাই হচ্ছে দান। সেটা ভিক্ষুও করতে পারবে দায়কেও করতে পারবে। যদিও বা বুদ্ধের সমকালীন বিশেষকরে ভিক্ষু সংঘকে ভাত-তরকারি ,পিণ্ডু দান দেওয়াকেই সংঘদান অর্থে বোঝাই, এখনকার মত টাকা দানকে নয়। বিস্তারিত অংগুত্তর নিকায়ে ধম্মাধম্ম সুত্ত, কুসলাকুসল সুত্ত, চুন্দ সুত্ত ইত্যাদি সুত্র অনেক আছে যেখানে পাপ, পুণ্য, কুসল, অকুসল, ধর্ম অধর্ম সম্পর্কে মূলিক দেশনা দেওয়া আছে।

এখন টাকাই আসি। টাকা দান দিয়ে যদি নির্বাণ যাওয়া যায় তাহলে সর্বপ্রথম আমেরিকার বিলিয়নেরাই নির্বাণ যাবে কারণ তারা মিলিয়ন বিলিয়ন ডলার টাকা দান দেয় সমাজ কল্যানের জন্য। সেজন্য আজ এরা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী জাতি, শক্তিশালী দেশ। সোসাল মেডিয়া, ইন্টারনেট, কম্পিউটার, প্রগামিং, রকেট থেকে শুরু করে এমনকি চাঁদেও গিয়ে ফিরে এসেছেন আমেরিকানরা।

সেজন্য যারা প্রচার করে যে ওদেরকেই এক মাত্র টাকা দান দিলেই তখনি নির্বাণ যাওয়া যাবে, তাহলে বুঝতে হবে যে এরা আসলেই তথাগত ভগবান বুদ্ধের ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞ, অনভিজ্ঞ এবং ধর্ম শিক্ষা তো দূরের কথা, সাধারণ জ্ঞানও আছে কিনা সন্দেহ। কারণ জ্ঞানী মানুষ অন্য দেশেও আছেন আর উনাদের শিক্ষা কিন্তু এদের মত নয়। এরাই সমাজ বিভ্রান্তকারী এবং বুদ্ধ ধর্মের উল্টো গমনকারী। এরা দায়ক হোক বা ভিক্ষু হোক, ধর্ম সম্পর্কে আরো অনেক কিছু শিখতে হবে। কারণ মিথ্যা দৃষ্টি হচ্ছে এক সোজা নরকগামীর উপাদান। যারা বলে, বুদ্ধ মানবসেবা করতে বলে যাননি , তাহলে বুঝতে হবে এরা আসলেই বুদ্ধের ভাষায় “মোঘ” “তুচ্ছ”…. মানে একদম অধম এবং খালি মস্তিষ্কের অধিকারী।

চোখ বন্ধ করে যদি নির্বাণ যাওয়া যায়, তাহলে সর্বপ্রথম অন্ধরাই আগে আগে নির্বাণ যাবে। কান বন্ধ করে যদি নির্বাণ যাওয়া যায়, তাহলে সর্বপ্রথম বধিররাই নির্বাণ যাবে। ভেজিটেরিয়ান হলে যদি শীল পালা হয়, তাহলে গরু ছাগলেরাই বেশি শীল পালন করে। যাক…..এরকম যুক্তি অনেক আছে।

মোট কথা হচ্ছে …… জনসাধারণকে মূর্খ বানিয়ে এবং বিভ্রান্তিকর ভুল শিক্ষা দেওয়াকেই সমালোচনা করা হয়। ব্যক্তিগত কাউকেই সমালোচনা করা হয়না। জনসাধারণের অর্থকে অপচয় করে স্বার্থবাদী, পুঁজিবাদী প্রথাকেই সমালোচনা করা হয় কারন সেই কোটি কোটি টাকা এম্নিতেই আসেনাই। জনসাধারণের অর্থ, জনসাধারণের জন্য কাজে না লাগিয়ে বিলাসবহুল গাড়ি ক্রয়, দায়িত্বহীন পাব্লিক অর্থ অপচয় করাকেই মানুষ সমালোচনা করে থাকেন। বাপের টাকা যদি হতো, নিজে কামানোর টাকা যদি হতো, কেউ কিছুই বলতোনা। দায়িত্বশীল ভাবে যদি জনসাধারণের অর্থ ব্যয় হতো তাহলে সমালোচনাও আসতো না।

মানব সেবা যেখানে, বুদ্ধের শিক্ষায় সেখানে। পরহিতৈষী সমাজসেবা যেখানে, বুদ্ধের শিক্ষা সেখানে। বহু শিল্প জ্ঞান, বহু টেক্নোলজি জ্ঞান, বিনয়ী , সুশিক্ষিত , সুভাষিত, পিতামাতা সেবাকারী, স্ত্রীসন্তান পোষণকারী, শিক্ষাকামী, উদার, মানবসেবী, সমাজসেবী , জ্ঞাতিহিতৈষী, জগৎহিতৈষী, বোধিসত্ত্বচারী ইত্যাদি এরাই বহুজন হিতকামী , বহুজন সুখকামী, আত্মহিতকামী, পরহিত কামী, সমাজে সুখ বহনকারী এরাই হচ্ছে প্রকৃত সৌগত বৌদ্ধগন । আর যদি এসব গুণাবলি আমাদের কাছে নেই তাহলে ত্রিলোক জ্ঞানী তথাগত ভগবান বুদ্ধ এবং উনার প্রজ্ঞার ধর্ম শিক্ষা থেকে আমরা অনেক অনেক দূরে।

সব্বে সত্তা সুখীতা ভবন্তু!

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s