এটা বোধগম্য যে পার্বত্য চট্টগ্রামের ফটোশপ-অরহন্ত ভিক্ষুরা এবং তাদের অন্ধ অনুসারীরা থাই, মায়ানমার, ভিয়েতনামী বৌদ্ধদের দেখিয়ে ওরাও তো লাখ কোটি টাকা দেয় বলে দাবী করেন। যারা স্ব-দাবিকৃত ফটোশপ করা অর্হত বা মার্গফললাভী ভিক্ষুরা এবং তাদের শিষ্যরা যুক্তি দেয় যে থাই বা মায়ানমার বা ভিয়েতনামেও নাকি মন্দিরগুলিতে প্রচুর পরিমানে সোনা, রৌপ্য, এবং বিশাল পরিমান টাকা দান করে। হ্যাঁ! সেটা একদম ঠিক!
মিয়ানমার হচ্ছে সোনার দেশ। থাইল্যান্ড এবং শ্রীলঙ্কাতেও পবিত্র বুদ্ধ ধাতু যেখানে যেখানে আছে, সেখানে বুদ্ধ তথা বুদ্ধের ধাতুকে সোনা দান দিয়ে আরো মূল্যবান বানায়। ঐতিহাসিক চৈত্যের গর্ভে সোনা, রৌপ্য ইত্যাদি নানা ধরনের ধাতু দান দেওয়া হয়। কিন্তু সাথে সাথে দেখবেন, এসব বিহার থেকে হাজার হাজার মানুষ গরিব, ধনী, শিক্ষিত , অশিক্ষিত সবাই উপকৃত হচ্ছেন। প্রত্যেক বছরে গরীব ছেলেমেয়েদের জন্য স্কলারশিপ দেওয়া হয়, শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়, বিহার কেন্দ্রিক স্কুল, ক্লিনিক, গেস্টহাউজ, প্রতিষ্ঠা করা হয়। নানা ভাবে সমাজ এবং মানবসেবায় এরা সবমসময় নিযুক্ত।
এটা সত্য যে ওরা অনেক ত্যাগী এবং মূল্যবান জিনিস দান করে কিন্তু তারা ব্যক্তিকে দান করে না, সামাজিক এবং মন্দিরের  তহবিলে দান করে যাহাতে সেটা সমাজ সেবায় কাজে লাগায়। এমনকি যদিও কোন এক প্রশিদ্ধ ভান্তেকে দান করে থাকেন, সেই প্রশিক্ষিত ভিক্ষুরা তাদের নিজস্ব বিলাসবহুল এবং ব্যয়বহুল গাড়ি বা বহুতল ভবনের জন্য জনসাধারণের অর্থ নষ্ট করেনা। এমনকি যদি এই ধরনের কোন ভিক্ষু ঐ বৌদ্ধ দেশগুলিতে থেকেই থাকে, অবশেষে আজ না হয় কাল তারা ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের দ্বারা সামাজিক এবং আর্থিক করাপশনের কারনে গ্রেফতার হয় এবং তাদের ভিক্ষুত্ব ত্যাগ করতে হয় কারণ যারা জনসাধারণের অনুদান অপচয় করেন তারা বুদ্ধের চীবর পড়নের যোগ্য নয়। থাইল্যান্ডে সংঘ আদালত এবং সংঘ পুলিশও আছেন। ভিয়েতনামে প্রত্যেক জেলা সদর থেকে একজন শিক্ষিত এবং জ্যেষ্ঠ ভিক্ষু বিভাগীয় কেন্দ্রীয় সভায় নির্বাচিত হন এক জনপ্রতিনিধি হিসেবে যিনি সরকারকে সমাজের সুবিধা অসুবিধাতে প্রতিনিধিত্ব করেন এবং সামাজিক উন্নয়নে সামিল হন।
প্রকৃতপক্ষে, থাইল্যান্ড, মায়ানমার, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া বা যেকোন বৌদ্ধ দেশের যে সমস্ত শতাব্দী প্রাচীন বৌদ্ধ ইতিহাস রয়েছে, তারা সমাজকল্যাণ, সামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষাগত উন্নয়ন এবং সম্প্রদায়ের উন্নতিতে সবচেয়ে সক্রিয় ভিক্ষু পেয়েছেন এবং আছেন।
থাইল্যান্ডের উদাহরণ হিসেবে: থাইল্যান্ড দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় এবং প্রগতিশীল বৌদ্ধ দেশ। রাজকীয় পরিবারগুলি একনিষ্ঠ বৌদ্ধ এবং সরকারি কর্মকর্তারাও প্রশিক্ষিত বৌদ্ধ অনুসারী। তারা সকলেই তাদের জীবদ্দশায় মাঝে মাঝে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী হিসেবে কাটিয়েছেন। প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে, স্ব-নির্ভরশীল অর্থনীতির বিষয়ে প্রয়াত রাজার দর্শন অনুসরণ করে, বৌদ্ধ ভিক্ষুরা এবং গ্রামবাসীরা স্কুল, রাস্তা, ক্লিনিক তৈরি করে এবং বিভিন্ন দাতব্য ও সম্প্রদায় পরিসেবায় নিযুক্ত। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের কারিগরী শিক্ষা, ধর্মীয় শিক্ষা, ধ্যান, সামাজিক কাজ এবং তাদের নিজস্ব মন্দির তৈরিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সাথে সাথে দায়কদায়িকারা এক সাথে বিহার এবং সামাজিক উন্নয়নে সমাজ সেবায় লেগে থাকেন।
থাইল্যান্ডে প্রত্যন্ত অঞ্চলে এক একটা বিহারে ভান্তেদের বেসিক মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং বিহারেগুলোতে এম্বুল্যান্স সেবাও আছে। সেজন্য তারা জনসাধারণের অর্থের অপব্যবহার করে না বা তাদের নিজস্ব বিলাসবহুল জীবনযাত্রার জন্য জনসাধারণের অনুদান নষ্ট করে না। গত covid-19 এর সময় ভিক্ষুরায় গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।
আজ থাই উপাসিকারাই ভারতে এবং বাংলাদেশে থাকা শ্রমণ ভিক্ষুদের “থাই মাতা” হয়ে মাসিক অর্থদান দিচ্ছে যা দিয়ে অনেকেই পড়াশোনা করতেছে এবং বিহারে বিহারে থাই বুদ্ধ মুর্তিও দান পাওয়া যাচ্ছে। কারন ওখানকার ভিক্ষুরা নারী জন্ম পাপ বলে দেশনা দেয়নি, গরিবের সন্তান্দের পাপি বা অধার্মিক বলে প্রচার করেনি। মনুষ্যত্ব এবং মানবসেবা যেখানে, সেখানেই তথাগত ভগবান বুদ্ধের শিক্ষা!
সত্যি কথা বলতে কি, আমাদের চাকমারা যদি সত্যিকার অর্থে অন্যান্য বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছ থেকে শিখতে পারে, তাহলে ফটোশপ করা অর্হত সংখ্যা অবশ্যই কমবে; অশিক্ষিত এবং স্ব-দাবী করা মার্গলাভীর ভিক্ষুদের সংখ্যাও কম হবে যারা জনসাধারণের অর্থ অপচয় করে। আসুন অন্যান্য প্রগতিশীল বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছ থেকে প্রকৃত অর্থে বৌদ্ধ সংস্কৃতি, বৌদ্ধ সামাজিক শিক্ষা ,পারিবারিক এবং মানবিক শিক্ষাগুলো শিখি।
