গুপ্তধনের সন্ধানে “ভূলংতুলি” মোন ( তৃতীয় এবং শেষ পর্ব)- In Search of hidden treasure of Bhulongtuli Mountain (3rd & last part) by Supan Chakma

প্রকৃতির এই মায়া খেলা ছড়িয়ে রয়েছে পুরো ভ্রমান্ধ জুড়ে। নানা জায়গায় নানা বৈচিত্র্যময় পরিবেশ পৃথিবীকে করেছে অদ্বিতীয়। পুরো পৃথিবী ঘুরে দেখলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের মত একটি খুজেঁ পাওয়া যাবে না। এ পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে জুমিয়াদের উঁচু উঁচু টং ঘর গুলো যেন পুরো পাহাড় ও বনের পাহারাদার । শত-শত বছরের ঐতিহ্য, ইতিহাস, কৃষ্টি ও জীবন ধারনের চর্চা এখনও চলমান। ঠিকিয়ে রেখেছেন স্থানন্তর কৃষি পদ্ধতি জুম চাষ প্রথা। এটিই তাদের অস্তিত্বের অংশ এবং পরিচয়।

ভোর বেলা :
হ্যাঁ ভোর হলো! ঘড়ির কাটা ঠিক ৫:০০টা বাজে এখন। চারদিকে নীরব পরিবেশ সাথে হালকা কুয়াশা ও মাঝে মাঝে ঘুম ভাঙানি পাখির ডাক। প্রকৃতির এ নীরব নিস্তব্ধতা সত্যিই মনের মধ্য অন্য এক অনুভূতি সৃষ্টি করে দেয়। একটু সাহস নিয়ে ঘনার সামনে দিকে এগিয়ে গেলাম চারদিকে আভা বাতাসে বনের পাতা গুলো এক শব্দ সৃষ্টি করছে,সাথে বাতাসের মৃদু ঠাণ্ডা হাওয়া মুখের পশম ভেদ করে চিরায়- চিরায় প্রবাহিত হচ্ছে। এ এক অন্য রকমের অনুভূতি।
ঠিক এমন সময় তল পেটে হলো বেশ গণ্ডগোল। দ্রুত বাঁশের ডগায় পানি নিয়ে ছড়ার উপরের দিকে ছুটে গেলাম, এক বাঁকে পাহাড়ের ঢালু জায়গায় বসে প্রকৃতির কাজ ছাড়তে বসলাম। কিন্তু, যে বাঁশে পানি নিয়েছি সে বাঁশ ফেটে পানি পড়ে সব শেষ! তাই এক অচেনা বনজ গাছের পাতা দিয়ে সর্বশেষ কাজটাও করলাম। মূলত এটাকে পাহাড়িরা “হাগ” গরানা বলে। (পানি ব্যবহার পরির্বতে টয়লেট টিস্যুর মত পাতার ব্যবহার) আমাদের পূর্ব-পুরুষেরা আগের দিনে বাঁশের বেত ও পাতা ব্যবহার করতো।
যাহোক, এরপর মাছ এবং এক সুগন্ধি লতা দিয়ে সকালের খাবার খেলাম। গত দুই দিন ধরে পাহাড়ে যা যা খাচ্ছি তা আমার জীবনে প্রথম। কত রকমের লতা পাতা যে খাবারের ম্যানুতে রাখা হয়েছে তা বলে বুঝানো যাবে না।


পাহাড়ে বেঁচে থাকতে হলে যে পাহাড়ের নিয়মেই বাচাঁতে হবে। আমার আপন কাকার কথাই ধরুননা, তিনি সারাজীবন এই গহীনে হাত্তোন করে কাঠিয়েছেন। পরিবারের জন্য তাকে বছরের ৬ মাস হাত্তোনে থাকতে হতো। তার উর্পাজিত অর্থ দিয়েই পরিবারের খাবারের জোগান ও ছেলেমেয়ে পড়াশোনার জোগান হতো। কিন্তু, শেষ জীবনে আমার কাকা ২০০৬ সালে হাত্তোনে গিয়ে বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে ঐ হাত্তোনেই মৃত্যু বরন করেন। তাই, এই পাহাড় ও হাত্তোনের সাথে আমার ও কাকার পরিবারের আলাদা আবেগ জমাট রয়েছে।

আগের দিনের বেশিরভাগ মানুষ হাত্তোনী করে জীবন নির্বাহ করেছেন। বলা যায় দীঘিনালা -মারিশ্যা ও পানছড়ি এলাকার মানুষ এ হাত্তোন সাংস্কৃতি নিয়ে যথেষ্ট পরিচিত। বাড়ির প্রধান (ছেলেরা) বাড়তি উপার্জনের জন্য বছরে চার-পাঁচ মাসের জন্য জঙ্গলে যেত। সেখান তারা গাছ-বাঁশ কেটে বাজারে বিক্রি করে যা পেত তা সংসারের খরচ করতো।আর মেয়েরা চার-পাঁচ মাস একাই বাড়িতে থেকে ছেলেমেয়ের ভরণপোষণ করত। হাত্তোনী বউদের সে সময় সমাজের দুষ্ট লোকের থেকে কম কথা শুনতে হয় নি!
যাক সেসব কথা না হয় পরে একদিন বলবো, এখন অতন্ত গুপ্ত ধনের সন্ধানের কথাই বলি।

ভুলংতলি মোনের পাদদেশ থেকে যাত্রা:

স্মিত, সজীব দা, মঙ্গল চান, নীলবরন ও শিকারী দাদা সহ সবাই প্রস্তুত। সবাই হালকা জিনিস সাথে নিল। খুব দরকারী জিনিস ছাড়া কেউ ভারি জিনিস সঙ্গে নিতে ইচ্ছুক নয়। কারণ, পাহাড়টি অনেক খাড়া সাথে সন্ধ্যার আগে সবাই আবার এই স্থানে ফিরে আসবে । তাই অযথা জিনিস নিয়েও লাভ নেই। এখন বাজে সকাল ৪:৩০টা আমাদের গাইড বলল আমরা এই পাহাড়টা ১ টা বাঝে সামিট করতে পারবো।
মূলত এই ভুলংতলি মোনটি সাথে আরো দুটি মোন রয়েছে যাদের সবার আগে আজছড়া মোন,রিচি মোন এবং ভুলংতলি মোন, ভুলংতলি মোনটি উঠতে হলে আগে আমাদের রিচি মোনটি দক্ষিণ পশ্চিম দিয়ে উঠতে হবে। রিচি মোনটি উঠা শেষ হলেই অর্ধেক থেকে ভুলংতলি মোন উঠতে হবে। এমন পাহাড়কে মূলত পর্বত বলে! মানে পর্বতের বৈশিষ্ট্য সাথে ভুলংতলি মোনের বৈশিষ্ট্য বেশ মিল।

আমার হাতে পানির বোটল ও কাধেঁ নিয়েছি ব্যাগ। ব্যাগে কিছু ঔষুধ এবং আমার ভিডিও করার কিছু গিয়ার।এছাড়া সবাই যে যার মত জিনিস নিয়েছে, পাহাড়ের উচু পথ বেয়ে উঠছি। বানর দলের ডাক,পাখির ডাক, পোকার কিচিকিচি আওয়াজের সাথে হালকা কুয়াশা ভেজা পাতা গুলো অসম্ভব সুন্দর। এ বনটির ধরন অন্য সব বনের চেয়ে সবকিছুই আলাদা। বড় বড় গাছের সাথে নানা লম্বা লম্বা গাছের শেখর সবই যেন আলাদা।
কিছু দূরে আমাদের দেখে এক বনমোরগ উড়ে গেল। আমার শিকারী দাদা বেশি পিছনে থাকায় সে এটি মারতে না পেরে বেশ হতাশ হলেন।
এরপর ঠিক করা হলো আমার যারা বনে প্রথম তারা মধ্য থাকবে, দক্ষ কেউ পিছনে থাকবে এবং শিকারীরা সামনে থালবে। এভাবে হাটি হাটি পা পা করে সামনে এগোতে থাকলাম। গত কয়েক দিনে সজীব দাদা আমাকে অবাক করে দিয়েছে। আমি ভাবতাম আমাদের টিমে সবচেয়ে দুর্বল এবং অদক্ষ সজীব দা, অথচ গত কয়েক দিনে সজীব দা সবার সাথে সমান ভাবে বনের সাথে খাপ খাপিয়েছে। বাকি সদস্য গুলো সবাক ঠিক থাক! ১৬ মত বয়স হবে টীমে মঙ্গল চ্যান নামে এক ছোট ভাই ছিল সবচেয়ে রাগী এবং একগুঁয়ে চরিত্রের। তাকে সোজা কোন কিছু বললে সে সব সময় বাকাঁই শুনতো,সে যায় হোক এ বয়সে একটু সচরাচর একগুয়ে হয়। তবে, আমি কোন কাজ দিলে খুব সহজে করিয়ে নিতে পারি। সে খুব সহজে বনের পশু পাখির আচঁ পেত। বনে ভাল্লুকের আনাগোনা জানা ছিল, তবে বনে মৌমাছির মধু খেয়ে যাওয়া দেখে সবাই ভাল্লুকের আচঁ পেলাম। নিঃসন্দেহ এটি দারুণ এ বনে এখনও বন ভাল্লুক রয়েছে।

আরবো মোন : টানা এক ঘন্টা উঁচু পাহাড় বেয়ে আরবো মোনের চূড়ায় আহরন করে সবাই ক্লান্ত! এ চূড়া থেকে ভালভাবে কোন কিছু দেখা যায় না। চূড়ায় প্রকৃতি বলতে গেলে বড় বড় কালো পাথর আর দৈত্যাকৃতি গাছের ঘন নি-চুপ বন। মাঝে মাঝে উত্তরের ঠাণ্ডা বাতাস বনের ঘন পাতা ভেদ করে বুক জড়িয়ে দেয়। ওহ্ তোমাদের বলা হয়নি “আরবো” মোন চূড়া থেকে ভূলংতুলি মোনের দক্ষিণ- পশ্চিমের উঠার এটি এক মাত্র পথ। ভূলংতুলি মোন উঠতে অনেক পথ রয়েছে তবে এটি সহজতর বলা যায়। আরবো মোনের নিজস্ব রুপ না থাকায় এটি ভূলংতুলি মোন হিসেবে ধরা হয়। এ আরবো মোন আজছড়া মোন, রিচি মোন ও ভূলংতুলি মোনের মিলনস্থল বলা যায়।
এখন সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হল বৃটিশরা যে গুপ্তধন রেখে গেছেন এ গল্পের সত্যতা সন্ধান করতে হবে।

ভুলংতলি বনের বড় বড় ধারালো পাথর : অতঃপর মোনের আরো গভীরে প্রবেশ করলাম। এখন যেখানে প্রবেশ বনের ভিতর কোন রাস্তা নেই সবই খোলামেলা, চারদিকে উঁচু উঁচু বৃক্ষের কারনে একটুও ছায়া নেই। সাথে বৃক্ষরাজির নিচে হাটু সমান গাছের শুকনো পাতা আর বড় বড় পাথর। কালো ঝরঝরে মাটির সাথে নানা হরেক জাতের পিপড়া গুলো পাতার গুলোর উপরে বাসা বেধেছে। উঁচু পাহাড় বেয়ে উঠতে খুবই কষ্ট। মাঝে মাঝে ভাল্লুকের গাছ চিড়ে মধু খাওয়া গুলো দেখা যাচ্ছে। বনের ভাল্লুক গুলো বড় বড় গাছ গুলোতে নক লাগিয়ে দাগ সৃষ্টি করেছে। সাথে বানর দল গুলো ” গ্রি” আম গাছটির মাথায় আম খাচ্ছে। বিশাল দৈত্যাকার গ্রি আম গাছটির নিচে হাজারো পাকা আম পড়েছে। মঙ্গল চান,সজীব দা সহ সবাই আমের টেষ্ট নিতে ব্যস্ত! মধুর মত আম গুলো কিছু খাওয়ার পর আবার “গিলের” লতি বেয়ে ভুলংতলি মোনে উঠতে লাগলাম।

নিঃশব্দে পাহাড় উঠা : শিকারী দাদার কড়া আদেশ ছিল পাহাড় উঠতে হলে নিঃশব্দে উঠতে হবে। তাদের সব সময় তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থাকত আশে পাশের ঝোপঝাড়ের দিকে। বনের হিংসা জীব জন্তু ও প্রকৃতির প্রতি সন্মার্ন দেখানোর জন্য এমন আদেশ।
আমি আগেই বলেছি ভুলংতলি উঠতে মোট বারজন থেকে মাত্র চারজন এ মোনটির উপরে উঠেছেন। বাকি গ্রামের ছেলেরা এখনও দেখেননি এ মোনটি, এটি এতই দূর্গম অভিযান যে এখানে খুব কম মানুষের পা পড়েছে। সবাই শুধু গল্পে শুনেছে, কিন্তু দেখেনি। গ্রামের মানুষের গুপ্তধনের গল্প গুলো ও বেশ প্রাচীন। গ্রামের লোক মুখে গুপ্তধন জীবন্ত হওয়া নামে নানা কথনও রয়েছে।
আমাদের যাত্রায় এখনও গুপ্ত ধনের সন্ধান পায়নি। তবে, বনের উপরিভাগে উঠা এখনও বাকি রয়েছে।

দক্ষিনের শেষ অপরিভাগ: টানা কয়েক ঘন্টা পাহাড় উঠতে উঠতে কয়েকবার বিশ্রাম নিয়েছিলাম। অনেক চেষ্টার পর দক্ষিনের অপরিভাগে পৌছালাম! এখান থেকে নাড়াইছড়ি বিস্তৃন প্রাকৃতিক বনভুমি দেখা যায়। সাথে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যর আদিবাসী এড়িয়া গুলোও দেখা যায়। সেখানে কিছু সময় বসে আবার রওয়ান দিলাম। এবার পৌছালাম একটি খোলা জায়গায়; এখান থেকে পূর্ব ও উত্তের সাজের পাহাড়শ্রেণী ও ভারত মিজোরামের “জম্পুইের” পাহাড় দেখা যায়। এ খোলা জায়গায়টি বড় বড় গাছের সাথে লম্বা লম্না লতা রয়েছে। শিকারীরা আমাদের এখানে রেস্ত নিতে বলে, তারা আবার ভুলংতলি মোনের উত্তর শেষ মাথার দিকে চলে যায়।

সবাই এখন ক্লান্ত! কারোর মনে বন্য প্রাণীর ভয়-ডর নেই। হাল্কা বাতাসের সাথে ওই দূরের সাজেক রেন্জের পাহাড় শ্রেণীর বরাবর কালো মেঘ গুলো জমাট বেধেঁছে। বানরের দলগুলোর চেঁচামেচি আরো তীব্র হয়েছে। রাজ নামের ছোট ভাইটি বলে উঠলো জীবনে প্রথমবার ভুলংতলি আসলাম কিছু স্মৃতি রেখে যায়। এরপর কয়েকজন কিছু স্থিরচিত্র তুললাম।

গুপ্তধনের সন্ধান ও বাঘ মারা : অদ্ভুত হলেও সত্য যে এ মোনটি একটি অদ্ভুত মোন। উপরে বড় বড় গাছের জন্য সারাদিন ছায়ার মাঝে আবৃত্ত থাকে। সাথে হাটু সমান মরা পাতা ও অদ্ভুত লতা পাতা রয়েছে। আমি সারা দুপুর ধরে সেই ব্রিটিশদের রেখে যাওয়ার গুপ্ত ধনের বাক্স খুঁজেতেছি।
মোনের মাঝামাঝি থেকে উত্তরের শেষ মাথা যেতে পাথর দেখতে পাওয়া যায়, সেই পাথর এক বিশাল বাঘ বসে থাকতেন বলে কথন রয়েছে। উত্তরে যাওয়া জন্য এটিই একমাত্র পথ, একটি লম্বা সরু পথ চলে গেছে, এটির ব্যাস মাত্র ১২ ফুটের মত, এটির দু পাশে হাজার ফুটের গিরিখাদ!
ঠিক, এই সুবিধার জন্যই বাঘ মশাই এ খাদের অপর প্রান্তে বড় পাথরে বসে ভুলংতলি মোনের শাসন করতেন। কিন্তু, গত কয়েক বছর ধরে শিকারীরা বনে বাঘ দেখতে পাচ্ছেন না।
আমাদের সাথে যাওয়া এক শিকারী কয়েক বছর আগে হরিণ শিকার করতে গিয়ে একটি কালো মেছো বাধ্য হয়ে শিকার করেছেন। তার কথা মতে, বাঘটি তার সামনে পরে যান এবং গুলি করে বাঘটি একটি অশ্বত্ব বৃক্ষের উপরে উঠে যান। এমন সময় তার হাতে একবার মারার মত বারুদ ছিল। কিন্তু, সন্ধ্যা ঘনিয়ে আশায় তার ফিরে আশার কোন চান্স ছিল না। ফিরে আসতে চাইলে যে বাঘ পিছু নিয়ে তাকে হত্যা করবে সেটা তার জানা ছিল। তাই বাঘের কোমর বরাবর ফায়ার করলে বাঘটি গাছ থেকে লাফিয়ে তাকে আক্রমন করে, এতে তিনি কোমরে থাকা “তাগল” নিয়ে বাঘের মাথা দুই ভাগ করেন!
শুনতে হলিউডের মত হলেও এটি শুনার পর আমার সে সময় গায়েঁ বেশ কাটা দিয়েছিল।
এছাড়াও একদিন ভাল্লুক গাছের ডালে মধু খেতে গিয়ে তাদের দেখে গাছ থেকে পড়ে অচেতন ভান করা সহ নানা কাহিনী শুনিয়েছেন। যদিও সেসব শিকারীরা ২০১০ সাল থেকে আর শিকার করেননা।
তবে, প্রকৃতপক্ষে এসব এলাকায় এখন আর বাঘ দেখা যায় না আর,কারণ হিসেবে খাদ্য সংকট ও পরিবেশের ভারসাম্য হীনতা দায়ী।

যাক সেসব কথা, এবার সত্যি সত্যি মোনের উত্তরে শেষ প্রান্তে যাওয়া যাক। বাঘ মারা বড় বড় গাছ ফেলে এসে এখন ঘন বাশঁ বনে প্রবেশ করলাম।
বাশঁ ভেদ করে যেতে যেতে এক পর্যায়ে অদ্ভুত ভাবে আমার পায়ের সেন্ডেল চিড়ে যায়।
ঠিক তখন থেকে আমার কষ্টের যাত্রা শুরু হয়ে, যত সামনে যায় তত পায়ে কাটা পুশ হতে তাকে। এক পর্যায়ে গুপ্তধনের খোজ বন্ধ করে দিই। গ্রাম বাসীর তথ্য মতে এটি জীব হয়েছে, এটি এখন কোথাও সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে। কোন একদিন হয়তো ধরা দেবে কোন একজনের কাছে।
এ পযন্ত্য আমার খোঁজ অ-সফল বলা যাবে, কিন্তু আমি কখনও এটি অ-সফল বলবো না। কারণ, হিসেবে ছয় চারদিনে এখনও যা পেয়েছি তা গুপ্ত ধনের চেয়ে কম কিসে?
এ পাহাড় শ্রেনি, বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠী ও বন্যতা আমার কাছে সাত রাজার ধনের মত। আমি মূলত গুপ্ত ধন বলতে আমার জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধিকে বুঝিয়েছি। বলতে পারো বস্তগত গুপ্তধনের চেয়ে পাহাড়ের মানুষের বাস্তব চিত্রগুলোই আসল গুপ্তধন।

ঠিক, এমন হিসাব মনে মনে কসে, উত্তরের শেষ প্রান্তে কোন রকম পৌছালাম।
এখান থেকে উত্তের ত্রিপুরা রাজ্য, উত্তর পূর্বে মিজোরাম রাজ্য, পশ্চিমে নাড়াইছড়ির বনভুমি ও দক্ষিণ পূর্বে কাচালং ও সাজেক নিভীর বনভুমি দেখা যায়।
পূর্বের সাজেক ও জম্পুই পাহাড়ে শ্রেণীতে কালো মেঘ জমাট বেধেছে! সবাই বললো আমরা দেরি করে ফেলেছি। আর মাত্র একঘণ্টা পরে মষুল ধারে বৃষ্টি হবে। তাই, সবাই পাহাড় থেকে নামার জন্য সিদ্ধান্ত নিল। আমার পায়ে সেন্ডেল চিড়ে যাওয়ায়, কিছু পাহাড়ি লতা দিয়ে সেন্ডেলের ফিতা বানিয়ে ফেরার জন্য যাত্রা শুরু করলাম।


আজরাত এবং আগামীকাল ভুলংতলি মোনের পাদদেশে সেই “বাজেতে” আবার থাকবো। এরপর শুরু হবে ফেরার পালা।
ভুলংতলি মোনের পাহাড় বেড়ে নেমে যেতে যেতে সাজেকের পর্বত শ্রেণীতে কালো মেঘের জমাট আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেল।
তবেই নতুন যাত্রা সাজেকর দিকে?

সুপন চাকমা
বন ও পরিবেশ কর্মী, পার্বত্য চট্টগ্রাম
বি.এ (অর্নাস) এ.এম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s