
২য় ও শেষ পর্ব….. (read the 1st part if you missed it)
নীরার সকল প্রস্তুতি শেষ। এখন…..
নীরা আস্তে আস্তে গলায় পড়ে নেয় গোলাবৃত্তটি, আর চোখ বন্ধ করে শেষবারের মত নিজের কাছে ও সৃষ্টি কর্তার কাছে ক্ষমা চেয়ে মুক্তির উদ্দেশ্যে নিজেকে পরিণতির কাছে তুলে দেয়…..
নিজেকে পরিণতির কাছে তুলে দেওয়ার সময় নীরা চোখ বুজতেই তার হঠাৎ মা -বাবার কথা মনে পড়ে।
মনে পড়ে তা মা তাকে কতটা কষ্টে আগলে রেখে বড় করেছে, আর বাবা! বাবা সেই সকালে কাজে বেরিয়ে মধ্য রাতে পরিশ্রান্ত দেহে ফেরে। কেবল মাত্র নীরার আর তার ভাইয়ের যেনো ভবিষ্যতে পড়াশুনোয় অসুবিধে না হয়, তারা যেনো আত্মনির্ভরশীল হয়ে বাচঁতে পারে। বাবার শরীর ভেজা ঘামে শার্টগুলো একাকার হয়ে থাকত, মানুষটা কোনো রকম খেয়ে মেয়েকে একটা আদুরে মাখা চুমু কপালে দিয়ে ঘুমাতে চলে যেতো, যা নীরা এখন ও বাড়ি গেলে বাবার কাছে ঘুমুতে যাওয়ার আগে পায়।
নীরার বাবা একজন ছোটখাট সরকারি চাকরিজীবি। মা গৃহিণী আর নীরা তাদের পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান (বড্ড স্নেহের)। নীরার মা-বাবা নীরাকে সবসময় সাহস জুগিয়েছে, সত্যিকারের মানুষ হওয়ার প্রেরনা জুগিয়েছে । নীরা তো কোনো দোষ করেনি, নীরা কেনো তাহলে একজন মানুষের আঘাতে আজ নিজেকে মৃত্যু যাত্রায় ঠেলে দিচ্ছে? নীরা তো এমন মেয়ে নয়? নীরা যদি আজ হার মানে তবে সে হার মানবে একজন মানুষের ওই কামনার স্বাদ মেটানো ঘামের কাছে। হার মানবে তার শেখা সব আদর্শ আর সবচেয়ে বেশি তার নিজের কাছে। নীরা এভাবে হেরে যেতে পারে না, নীরাকে বাচঁতে হবে, অনুপ্রেরণার মশাল হতে হবে, হতে হবে একজন সত্যিকার অর্থে মানুষ, তার মত অনেকের নিবে যাওয়া আশার অগ্রগামী মশাল হয়ে উঠতে হবে, যে নিজেকে জ্বালিয়ে আশেপাশের সব আঁধারকে হারিয়ে আলোকিত করবে। বেঁচে থাকার আসল মানেটা কি সেটা সকলের কাছে পৌঁছে দিতে পারবে।
নীরার মন ব্যকুল হয়ে ওঠে, নীরার এখন প্রচন্ড বাচঁতে ইচ্ছে করছে। যেনো এই শেষবেলায় অবশেষে বেঁচে থাকার মানেটা এতদিনে খুঁজে পেয়েছে। নীরা মনের মধ্যে অনেক শক্তি অনুভব করে। বেচেঁ থাকার শক্তি। নীরা দ্রুতই চোখ খুলে একটু দম নেয় আর মনের সমস্ত শক্তি নিয়ে পুনরায় সৃষ্টি কর্তাকে স্মরণ করে মন প্রাণ দিয়ে, তার পর খুব দ্রুত গতিতে গোলাবৃত্তটি গলা থেকে বের করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। নীরা অনুভব করে যেনো কোনো অলৌকিক শক্তিও আজ চাইছে সে বেঁচে থাকুক।
নীরা বাচঁবে, নীরাকে বেঁচে থাকতেই হবে।
বেঁচে থাকুক নীরারা, হার না মেনে.. ☘
Writer : Ms Eshee Chakma, BSC in Civil Engineering, European University of Bangladesh.